শিরোনাম:

মেট্রোরেল রক্ষণাবেক্ষণে এক টাকাও বরাদ্দ নেই

সংবাদ৫২ ডেস্ক
অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৮ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০৬:২৮
photo

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের উড়ালপথ থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এই বহুলপ্রচারিত গণপরিবহনের নিরাপত্তা মান ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে একই এলাকায় দ্বিতীয়বার এ ধরনের ঘটনা ঘটল—এবারের দুর্ঘটনায় এক পথচারীর মৃত্যু এবং দুইজন আহত হয়েছেন।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেট্রোরেল এখনো ঠিকাদারের ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি প্রিয়ডে’ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়নি। অথচ জাতীয় বাজেটে প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির জন্য বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকায়। তবে দুই অর্থবছরেই রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি।

ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকল্পটি এখনও ঠিকাদারদের পর্যালোচনার অধীনে থাকায় বড় কোনো মেরামত ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যোগাযোগ ও প্রকৌশল বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি প্রিয়ড’ শেষ হলে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অপরিহার্য।

চলতি অর্থবছরে ডিএমটিসিএলের প্রস্তাবিত পরিচালন ব্যয় ছিল ২৭০ কোটি টাকা। কিন্তু বাজেট অনুমোদনের সময় তা কমিয়ে ২১৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অথচ উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

ডিএমটিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুখ আহামেদ বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণে কিছু বরাদ্দ আছে, তবে এখনো ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড চলায় বড় কোনো ব্যয় দরকার নেই। আগামী বছর এই সময়কাল শেষ হলে বরাদ্দ তিনগুণ বাড়ানো হবে।” তবে প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বাস্তবে কোনো আর্থিক বরাদ্দ নেই।

গত রোববারের দুর্ঘটনায় ৮০ কেজি ওজনের একটি বিয়ারিং প্যাড মেট্রোরেল ট্র্যাক থেকে খুলে পড়ে এক পথচারীর প্রাণহানি ঘটায়। এ নিয়ে এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটল। এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেট এলাকার ৪৩০ নম্বর খুঁটি থেকে একই ধরনের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমান সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির এক সদস্য জানান, ঘটনাস্থলের নকশা ও কম্পন কাঠামো বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত কারণ নির্ধারণ করা হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট নেই—এটা আগে জানা ছিল না। এখনই বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বছরে অন্তত একবার পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন করানো হবে।”

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে একই এলাকায় দুইবার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনা শুধু অবকাঠামোগত ত্রুটিই নয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও বাজেট পরিকল্পনার ঘাটতিও স্পষ্ট করে তুলেছে। রাজধানীর কোটি মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এখনই মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণ কাঠামো ও অর্থায়ন নীতিতে বাস্তবসম্মত পরিবর্তন আনা জরুরি।

 
 

শেয়ার করুন