অফিস ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আমেরিকার ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে দক্ষিণ-পশ্চিম জ্যামাইকায় নিউ হোপের কাছে ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’। কয়েক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়ে তছনছ করে দেয় দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
ঝড়ে অসংখ্য বাড়িঘরের ছাদ উড়ে গেছে, উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ২৮ লাখ মানুষের। জ্যামাইকার দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি সমৃদ্ধ ‘ব্রেড বাসকেট’ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়কে ক্যাটাগরি-৫ বলে চিহ্নিত করেছে আবহাওয়া দপ্তর। গত ১৭৪ বছরে এত ভয়াবহ ঝড়ের নজির নেই জ্যামাইকায়। এমনকি এক শতাব্দীর মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্যামাইকায় আঘাত হানার পর ‘মেলিসা’ কিছুটা দুর্বল হয়ে বর্তমানে ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উত্তর-পূর্ব দিকে কিউবার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রভাবে জ্যামাইকা, হাইতি ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এখন পর্যন্ত অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন জ্যামাইকার, তিনজন হাইতির এবং একজন অন্য দ্বীপের বাসিন্দা।
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলনেস দেশটিকে ‘দুর্যোগ এলাকা’ ঘোষণা করেছেন। তবে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির সেন্ট এলিজাবেথ অঞ্চলের বিশাল অংশ পানিতে ডুবে গেছে। বহু এলাকা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উদ্ধারকাজ পুরোপুরি শুরু করা সম্ভব হয়নি, অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ। ঝড়ের সময় প্রায় ২৫ হাজার বিদেশি পর্যটক জ্যামাইকায় ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
এদিকে, জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে বার্বাডোজ থেকে প্রায় ২ হাজার টন ত্রাণসামগ্রী জ্যামাইকায় পাঠানো হবে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক জানিয়েছেন, কিউবা ও হাইতিসহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন দেশগুলোতেও সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
বর্তমানে ‘মেলিসা’ কিউবার দিকে ধেয়ে আসছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সকালে কিউবার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সান্তিয়াগো দে কিউবার উপকূলে ঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিবেশী বাহামায়ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞের এই ঝড় ‘মেলিসা’ এখন সমগ্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠেছে।