শিরোনাম:

হাজার কোটি টাকার মালিক ‘ডিবি হারুন’: রক্ষক থেকে লুটেরা সাম্রাজ্যের নির্মাতা

সংবাদ৫২ ডেস্ক
অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২১ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০২:১৪
photo

মাত্র ৮০ হাজার টাকার সরকারি বেতনের চাকরিতে থেকেও তিনি গড়ে তুলেছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে তার এই অঢেল সম্পদের জাল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা দেশে রেখে গেছেন বিপুল অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদের পাহাড়।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া হারুন অর রশীদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশে চাকরি পান। পরবর্তীতে জানা যায়, তার পিতা ছিলেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপি সরকারের আমলে তার পদায়ন স্থগিত হয়, তবে ওয়ান-ইলেভেনের সময় চাকরি স্থায়ী হয় তার। শেষ পর্যন্ত তিনি ডিআইজি পদমর্যাদায় পৌঁছে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রে হারুনের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদ রয়েছে। শুধু উত্তরাতেই তার দুই ডজনের বেশি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও মার্কেট রয়েছে। এসবের দেখভালের জন্য উত্তরায় আলাদা অফিসও গড়ে তোলেন তিনি। কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলমের মাধ্যমে এসব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা হতো।

উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে তার নিজস্ব আটতলা বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করতেন তিনি। একই সেক্টরের আরও কয়েকটি সড়কে তার একাধিক ভবন, মার্কেট ও বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। কিছু প্লট বিক্রি করে শত কোটি টাকা আয় করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। বনানী, পূর্বাচল ও জমজম টাওয়ার এলাকার কাছেও একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে তার নামে।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শত কোটি টাকার আলোচিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মালিক হারুন অর রশীদ। এই রিসোর্টটি পরিচালনা করেন তার ভাই ডা. শাহরিয়ার। অভিযোগ রয়েছে, রিসোর্ট নির্মাণে স্থানীয়দের জমি দখল করা হয়েছে।

গাজীপুরে তার রয়েছে সবুজ পাতা রিসোর্ট, গ্রিন টেক রিসোর্ট এবং নন্দন পার্কে শেয়ার। টঙ্গীতে “জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড” ও “ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্প”-এ অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানা যায়। তার স্ত্রীর মালিকানাধীন আমেরিকান ডেইরি কোম্পানিতেও মূল বিনিয়োগকারী হারুন নিজেই।

গাজীপুরে দায়িত্ব পালনকালে অসংখ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় ভূমি দখল ও চাঁদাবাজিরও অভিযোগ আছে তার নামে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে হারুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা হয়। কিন্তু সে সময় ক্ষমতার প্রভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া আটকে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুদক পুনরায় তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে এবং প্রাথমিক তদন্তেই দুর্নীতির প্রমাণ পায়।

একজন পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু হারুন অর রশীদের ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব পরিণত হয় ব্যক্তিগত লোভ ও দখলবাজির উৎসে। এখন দুদকের অনুসন্ধান চলছে—কীভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা তার সীমিত বেতনের চাকরি থেকে গড়ে তুললেন হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্য।

তার সম্পদের পরিমাণ ও উৎসের হিসাব এখন জাতীয় প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। জনমনে একটাই প্রশ্ন—রক্ষক হয়ে যখন কেউ ভক্ষক হয়, তখন ন্যায়বিচার কে নিশ্চিত করবে?

শেয়ার করুন