গত পাঁচদিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। রোববার সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই ঘটনা নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বৈঠকে নিরাপত্তা সংস্থা, পুলিশ সদর দপ্তর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বৈঠকে বিশেষভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেট্রোরেল, গুরুত্বপূর্ণ সিভিল ও সামরিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি দ্রুত নিরূপণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, “বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে আমাদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সংস্থা দ্রুত পৌঁছালেও পরিস্থিতি এত ভয়াবহ ছিল যে সরাসরি тушে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আমরা নাশকতা-সহ যেকোনো দিক খতিয়ে দেখব।”
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পৃথক দুটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিভিল অ্যাভিয়েশন (বেবিচক) কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্বের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে, যার ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঢাকার মিরপুরের কেমিক্যাল ও পোশাক কারখানা, চট্টগ্রামের সিইপিজেড এবং শাহজালাল বিমানবন্দর—এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডগুলো দেশের অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে চালানো হয়েছে। সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পরবর্তী সময়ে মেট্রোরেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি ও সামরিক স্থাপনা চিহ্নিত হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক শত্রুরা এখনও সক্রিয়। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডগুলো পূর্বপরিকল্পিত বলে জনগণ বিশ্বাস করে।’ জাতীয় নাগরিক পার্টি, বিকেএমইএ ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা একই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
নিরাপত্তা সংস্থা সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে টহল, নজরদারি ও কেপিআই স্থাপনার নিরাপত্তা প্রটোকল কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া শিল্পমালিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।