শিরোনাম:

আনারসের ফেলনা পাতা থেকে বিশ্বমানের ফাইবার, গ্রামবাংলার সম্ভাবনা রপ্তানির পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক
অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ০৬ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০৩:৫৩
photo

ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাহাড়ি অঞ্চলে এক সময় আনারস খাওয়ার পর পাতাগুলো ফেলে দেওয়া হত। আজ সেই পাতাই হয়ে উঠেছে স্বর্ণের সমতুল্য। গ্রামে গ্রামে আনারসের পাতা থেকে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের ফাইবার, যা দিয়ে সুতা তৈরি হয়ে রপ্তানি হচ্ছে ফিলিপাইন, নেদারল্যান্ডস, আমেরিকা ও ইউরোপের নামকরা ফ্যাশন ব্র্যান্ডে।

 

পাইনা বা পিনা নামে পরিচিত এই তন্তু আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হিস্পানিক আমলে গ্রিস ও আফ্রিকার দেশে রপ্তানি হতো পাইনা ফাইবার দিয়ে তৈরি কাপড়। বিশেষ করে ফিলিপাইনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘বারোং তাগালোগ’ ও ‘রারোত সায়া’ তৈরিতে এই ফাইবার বহুল ব্যবহৃত হয়। এক সময় সুতি ও সিল্কের জনপ্রিয়তায় পাইনা ফাইবার ভুলে যাওয়া হলেও, দুই দশকের মধ্যে এটি আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং এখন ইউরোপ ও আমেরিকার ফ্যাশন ব্র্যান্ডেও জনপ্রিয়। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম মহিষমারাতে আনারসের পাতা থেকে ফাইবার উৎপাদন করছে মেসার্স রনি এগ্রো ফাইবার প্রসেসিং ফার্ম। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. জহির রায়হান তালুকদার জানান, “এই প্রকল্প শুধু রপ্তানিমুখী আয়ই সৃষ্টি করছে না, স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি করছে।”

 

প্রতিদিন শত শত আনারসের পাতা হাতে ঘষে তন্তু বের করছেন নারী-পুরুষ কর্মীরা। প্রতি কেজি পাতা থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ সুতা। এক কর্মী নারকেলের খোল ও ভাঙা প্লেট ব্যবহার করে ৫০০ পাতা থেকে তন্তু বের করতে পারেন। এরপর তা ধুয়ে, শুকিয়ে, মোম দিয়ে মসৃণ করে জোড়া দেওয়া হয়। তৈরি সুতা দিয়ে বোনা হয় কাপড়, এবং সূচিকর্ম (‘কালাডা’) যোগ করে তৈরি হয় হালকা, মসৃণ ও টেকসই ফ্যাশনেবল পোশাক, ব্যাগ ও টেবিল ম্যাট।

 

কৃষকরা এই উদ্যোগে খুশি। আনারস চাষি শাহিদা আক্তার বলেন, “আগে পাতাগুলো ফেলেই দিতাম। এখন বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে। আগে বাগান কেটে ফেলতে হত, এখন কোম্পানি টাকা দিয়ে পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।” বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের আরও কারখানা স্থাপন হলে শুধু আনারস চাষ নয়, পাতা বিক্রিও লাভজনক হবে। এতে কৃষকের আয় বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি পাবে।

 

এক সময় অবহেলিত আনারসের পাতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনার সোনার সুতো আজ রপ্তানির মাধ্যমে গ্রামবাংলা, দেশের অর্থনীতি এবং বিশ্বমানের ফ্যাশনে নতুন দিশা দেখাচ্ছে।

শেয়ার করুন