অফিস ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মনোনয়ন পাওয়া ও বঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকদের আন্দোলন–বিক্ষোভে অস্বস্তিতে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। দ্রুত সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির তৃণমূল নেতাদের।
বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলে বিভেদ প্রকট হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকরা মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। অন্যদিকে ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থকরাও পালটা কর্মসূচি দিয়ে উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন। এতে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিএনপি; লাভবান হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দল।
দলের হাইকমান্ড স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল—মনোনয়ন পাওয়া ও বঞ্চিতদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণসংযোগ চালাতে হবে। কিন্তু বেশ কয়েকটি আসনের সম্ভাব্য একক প্রার্থী এখনো মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলেননি। কেউ কেউ আবার নির্বাচনী মাঠে এককভাবে শোডাউন করছেন। এতে তৃণমূলে ক্ষোভ আরও বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আসনভিত্তিক কোন্দলের কারণ, প্রার্থীদের অবস্থান ও জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে একটি টিম কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হবে।
ঘোষিত ২৩৬ আসনের মধ্যে অন্তত ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থীদের স্থানীয় জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেতাকর্মীরা; মনোনয়নবঞ্চিতদের জনপ্রিয়তাই বেশি—এমন অভিযোগও রয়েছে।
চাঁদপুর–২: তানভীর হুদার সমর্থকদের ধারাবাহিক বিক্ষোভ।
সুনামগঞ্জ–৫: মিজানুর রহমানকে প্রার্থী করার দাবিতে প্রতিদিনই সমাবেশ।
কুষ্টিয়া–১: শরিফ উদ্দিন জুয়েলের সমর্থকদের মানববন্ধন ও গণমিছিল।
কুষ্টিয়া–৪: সৈয়দ মেহেদী রুমির মনোনয়ন বাতিলের দাবি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৪: কবির আহমদ ভুঁইয়ার পক্ষে বিক্ষোভ।
নরসিংদী–৪: আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলকে প্রার্থী চায় স্থানীয়দের বড় অংশ।
নাটোর–১: তাইফুল ইসলাম টিপুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন।
নারায়ণগঞ্জ–২: মনোনয়নবঞ্চিতরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ–মশাল মিছিল।
গাইবান্ধা–২: সাবেক সচিব আমিনুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি।
চট্টগ্রাম–১২, ১৩: বিক্ষোভ–সমাবেশ অব্যাহত।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম–৪ ও ১৬, সিলেট–৬, রংপুর–৩, সাতক্ষীরা–২ ও ৩, গাইবান্ধা–৪, ঠাকুরগাঁও–৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২, কুড়িগ্রাম–২, নোয়াখালী–৫, নীলফামারী–৪, দিনাজপুর–২, হবিগঞ্জ–৪, জয়পুরহাট–১ ও ২, ময়মনসিংহের একাধিক আসন, মুন্সীগঞ্জ–২, কুমিল্লা–৫, ৬ ও ১০, রাজশাহী–৪ ও ৫, রাজবাড়ী–২, নওগাঁ–১, ৩ ও ৪, পাবনা–৪, মৌলভীবাজার–২ আসনেও বিরোধ অব্যাহত রয়েছে।
অনেক মনোনয়নবঞ্চিত নেতা অভিযোগ করেন—সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না; বরং নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে একক শোডাউন করছেন। কোথাও কোথাও বঞ্চিতদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটছে।
খুলনা–৪ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা পারভেজ মল্লিক বলেন, “প্রার্থী এখনো কোনো সহযোগিতা চাননি, কথা বলেননি। তবুও কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা ধানের শীষের পক্ষে মাঠে আছি।”
একই অভিযোগ বরিশাল–২ আসনেও। সেখানে প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টার–সাইনবোর্ড ছেঁড়ার অভিযোগ উঠেছে।
কিছু আসনে হাইকমান্ডের নির্দেশ মানা হয়েছে। যেমন—
গাজীপুর–২: এম মঞ্জুরুল করিম রনি বঞ্চিতদের বাড়ি গিয়ে দেখা করেছেন, একসঙ্গে প্রচারণায় নেমেছেন।
বরিশাল–৫: মজিবর রহমান সরোয়ার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “এটি চূড়ান্ত নয়, সম্ভাব্য তালিকা। প্রয়োজনে পরিবর্তন হবে। অনেক আসনে দুই–তিনজন করে যোগ্য নেতা আছেন, তাই ক্ষোভ স্বাভাবিক। আমরা কথা বলে সমাধান করছি।”