শিরোনাম:

সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞা: দ্বীপবাসী ও ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায়

সংবাদ৫২ ডেস্ক
অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৬ অক্টবার ২০২৫ | সময়ঃ ০৭:১৪
photo

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। পর্যটননির্ভর এই দ্বীপে রাত্রিযাপন বন্ধ থাকলে পুরো বছরের আয় ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

সেন্টমার্টিনের অর্থনীতি মূলত পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে পর্যটন মৌসুম। এ সময়ই হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, খাবার হোটেল, শুঁটকি ব্যবসা, ভ্যান ও অটোরিকশাচালক—সবাই সবচেয়ে ব্যস্ত থাকেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগে ৫–৬ মাসের পর্যটন মৌসুমের আয় দিয়েই তারা সারা বছর সংসার চালাতেন। বর্তমানে দিনে মাত্র দুই হাজার পর্যটকের প্রবেশের অনুমতি থাকলেও, রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় সেই আয় মারাত্মকভাবে কমে যাবে।

সেন্টমার্টিন হোটেল ও রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি বলেন,

“নভেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। আমরা হোটেল-রিসোর্ট সংস্কারসহ নানা প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু যদি পর্যটকরা থাকতে না পারেন, তাহলে বিনিয়োগের টাকাও তুলতে পারব না। দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। এই নিষেধাজ্ঞা মানে আমাদের কর্মহীন হয়ে পড়া।”

শুঁটকি ব্যবসায়ী রহিম উদ্দিন বলেন,

“দ্বীপে শুঁটকির ব্যবসা চলে শুধু পর্যটক মৌসুমে। পর্যটক না এলে দোকান খোলা হয় না। রাত্রিযাপন বন্ধ থাকলে শুঁটকির বাজারই থাকবে না, পরিবার চালানোও কঠিন হয়ে যাবে।”

স্থানীয়রা মনে করছেন, টেকনাফ দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে জাহাজ চলাচল পুনরায় চালু হলে এবং পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি ফিরিয়ে আনলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। বর্তমানে কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া ও উখিয়ার ইনানী ঘাট থেকে জাহাজ চলাচল করছে, তবে এতে সময় বেশি লাগায় পর্যটকদের অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন,

“দ্বীপের মানুষ সাগরে মাছ ধরা আর পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটকদের রাত্রিযাপন বন্ধ মানে দ্বীপের মানুষকে বেকার করে দেওয়া। পরিবেশ রক্ষা জরুরি, তবে মানুষের জীবন-জীবিকাও টিকিয়ে রাখা সমান গুরুত্বপূর্ণ।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন জানান,

“পর্যটকদের যাতায়াত ও রাত্রিযাপন সংক্রান্ত নতুন কোনো সরকারি আদেশ এখনও হাতে আসেনি। আগের সিদ্ধান্তই আপাতত বহাল আছে।”

পর্যটকদের চোখে সেন্টমার্টিন মানে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য, আর দ্বীপবাসীর কাছে এটি বেঁচে থাকার অবলম্বন। তবে রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলে সেই সৌন্দর্যের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াই আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

শেয়ার করুন