অফিস ডেস্ক
কাদা ও মাটির সংমিশ্রণে তৈরি ঘরে যেমন থাকে প্রকৃতির প্রশান্তি, তেমনি গরম-শীত-বর্ষা—যে কোনো আবহাওয়াতেই মেলে স্বস্তির শীতলতা। একসময় গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এই মাটির ঘর। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া আর প্রবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ারে ফেনীর গ্রামাঞ্চলেও এখন একের পর এক পাকা দালান উঠছে, ফলে ঐতিহ্যের প্রতীক সেই মাটির ঘরগুলো বিলুপ্তির পথে।
তবুও কিছু ঘর এখনো টিকে আছে অতীতের স্মৃতি হয়ে। ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এসব মাটির ঘর আজ ইতিহাসের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্তটি দেখা যায় পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর গুথুমা গ্রামের তাকিয়া পাড়ায়—একটি দোতলা বিশিষ্ট মাটির ঘর, যা এখন স্থানীয়দের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
সবুজ প্রকৃতির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দোতলা মাটির ঘর যেন এক টুকরো প্রশান্তি। সিনেমা বা ছবিতে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও বাস্তবে এমন ঘর এখন প্রায় আকাশের চাঁদের মতো বিরল।
ঘরটির মালিক আবদুল মোমেন মঞ্জুর জানান, “এই ঘরটি প্রায় তিন দশকের পুরনো। আমরা যত্ন নিয়ে এখনো টিকিয়ে রেখেছি। গরমে ঠান্ডা, শীতে উষ্ণ—এই ঘরে থাকা মানেই এক অন্য রকম শান্তি।”
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা বশর মিয়া বলেন, “আগে প্রায় সব ঘরই ছিল মাটির। এখন পাকা দালান ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। কিন্তু এই ঘরটা দেখলেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে।”
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সবুরা খাতুন স্মৃতিচারণ করে বলেন, “বিয়ের পর এই মাটির ঘরেই সংসার শুরু করেছিলাম। তখন আশেপাশের সব ঘরই ছিল মাটির। বিকেলে উঠানে সবাই মিলে গল্প করতাম, পিঠা বানাতাম। এখন সেই দিনগুলো শুধু স্মৃতি।”
স্থানীয় সংবাদকর্মী আজমীর মিশু ঘরটি পরিদর্শন শেষে বলেন, “এমন দোতলা মাটির ঘর এখন সত্যিই বিরল। নির্মাণশৈলী ও স্থায়িত্ব দেখে বোঝা যায়—গ্রামীণ কারিগরদের দক্ষতা কতটা নিখুঁত ছিল। সংরক্ষণ করা গেলে এটি ঐতিহ্যের নিদর্শন ও পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।”
স্থানীয় তরুণ সাগর জানান, “আমরা ছোটবেলায় এই ঘরের সামনে খেলতাম। এখন মনে হয় ইতিহাসের এক জীবন্ত অংশ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এমন ঘরগুলো টিকিয়ে রাখা দরকার—এটা আমাদের গ্রামের গর্ব।”
দর্শনার্থী তানজিদ শুভ বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এমন মাটির ঘর শুধু সিনেমায় দেখা যায়। কিন্তু এখানে এসে অবাক হয়েছি—প্রকৃতির মাঝে এমন ঘর মানেই এক অনন্য শান্তির ছোঁয়া।”