মুন্সীগঞ্জে শ্রমিক নেতার কাছে আওয়ামী লীগ নেতার চাঁদা দাবির অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক | সংবাদ ৫২.কম
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
Sangbad52

মুন্সীগঞ্জে শ্রমিক নেতার কাছে আওয়ামী লীগ নেতার চাঁদা দাবির অভিযোগ

 

অবজারভার প্রতিনিধি : 

নৌ-পুলিশের কাছে মিথ্যা লিখিত অভিযোগ এবং তা প্রত্যাহারের বিনিময়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির এক সদস্যে'র বিরুদ্ধে।

এস এম আনিছুর রহমান খোকন নামে এই চাঁদাবাজ যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য। থাকেন ঢাকার কদমতলী থানাররায়েরবাগ এলাকায়। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বানিয়াল ভূকৈলাশ এলাকার মৃত খালেক সরকারের ছেলে তিনি।  

অডিও কল রেকর্ডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তার আত্মীয় বলে পরিচয় দেন।

 

বিভিন্ন কাজ এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এমনই এক অভিযোগ করেছেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারার সূচনা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া মিয়াজী। তিনি বাংলাদেশ জাহাজ শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নৌযান শ্রমিক নেতা গোলাম কিবরিয়া মিয়াজীর পক্ষে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা খোকনের বিরুদ্ধে ঢাকার কদমতলী থানায় একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

থানায় দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য এস এম আনিছুর রহমান খোকন রাজধানীর হাতিরঝিল নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে সূচনা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও নৌযান শ্রমিক নেতা গোলাম কিবরিয়া মিয়াজীর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

এরপর বিষয়টি নিয়ে আনিছুর রহমান খোকনের সাথে গত ৯ এপ্রিল বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের উত্তর চর-বানিয়াল এলাকায় দেখা করতে যান ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া মিয়াজীর ভাতিজা মেহেদী উদয় মিয়াজী ও সূচনা এন্টারপ্রাইজের হিসাবরক্ষক সিহাব সিকদারসহ আরও কয়েকজন। 

এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা আনিছুর রহমান খোকনসহ তার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হয় উদয় মিয়াজী ও সিহাব সিকদার। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকায় ফিরে রাতেই রাজধানীর কদমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে হামলাকারীরা আহত ভুক্তভোগীদের সাথে থাকা দুটি মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়। 

এদিকে চাঁদা দাবির বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া মিয়াজী জানান, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অবৈধ চাঁদা আদায়ের লক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিল নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে ভুয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে অভিযোগের কপি আমার মুঠোফোনে পাঠিয়ে মোবাইলে কল দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। (এই ফোন কলের কথোপকথনের রেকর্ডিং আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে)। টাকা দিলে নৌ-পুলিশের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় আমাকে। 

এছাড়া টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

কিবরিয়া মিয়াজী জানান, তাকে অভিযোগের ভয় দেখিয়ে এবং তা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হাতেপায়ে ধরে তা শেষ করে দেয়ার কথা বলে এস এম আনিছুর রহমান খোকন। 

খোঁজ নিয়ে দেখি খোকন একটা প্রতারক ও চাঁদাবাজ, এটাই তার পেশা। শুধু তাই নয়, ওই টাকা ছাড়াও প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়ে এবং উপদেষ্টার মাধ্যমে যে কোন কাজ তিনি করাতে পারেন বলেও খোকন তাকে বলেন।  

স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী সরকার পতনের পর এস এম আনিছুর রহমান খোকন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সম্প্রতি খোকন আবারও পুরনো পেশায় ফিরে আসে। 

মানুষদের মিথ্যা মামলা এবং লোকজনের নামে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দেয়ার ভয় দেখিয়ে হয়রানি এবং চাঁদাবাজিই তার পেশা।

আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আনিছুর রহমান খোকনের মোবাইলে কল দিলে এই প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে তার ছেলে পরিচয় দিয়ে বলেন, আব্বু মোবাইল রেখে বাইরে গেছেন। আঁঙ্কেল রাতে আব্বুর ওয়ার্টঅ্যাপে কল দিয়েন বলে মোবাইল কল কেটে দেয়। পরে ওয়ার্টঅ্যাপ এবং মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও কল রিসিভ করেননি। 

আওয়ামী লীগ নেতা খোকনের বিরুদ্ধে 

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কদমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আইয়ুব বলেন,লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ওদিকে, লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা খোকনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল আলম।