অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৮ অক্টবার ২০২৫, সময়ঃ ০৩:৫৫
অরুণাচল প্রদেশ থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ সম্পন্ন করেছে বেইজিং
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের একেবারে কাছে, তিব্বতের লুনজে বিমানঘাঁটিতে চীন নতুন করে ৩৬টি আধুনিক বিমান আশ্রয়কেন্দ্র (হ্যাঙ্গার) নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এবং আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সামরিক ও কৌশলগত মহলে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন স্থাপনাগুলো ম্যাকমোহন লাইন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে এবং অরুণাচলের কৌশলগত শহর তাওয়াং থেকে প্রায় ১০৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অবকাঠামো চীনের যুদ্ধবিমান, আক্রমণ হেলিকপ্টার ও সশস্ত্র ড্রোন মোতায়েনের সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে—যা ভারতের জন্য এক নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।
সাবেক ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধনোয়া (অব.) এনডিটিভিকে বলেন, “এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মাণের অর্থ, ভবিষ্যতের কোনো সংঘাতে চীনা ট্যাকটিকাল ফাইটার ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো এখান থেকেই অভিযান পরিচালনা করবে। আমি ২০১৭ সালের ডোকলাম সংকটের সময়ই বলেছিলাম—যেদিন তারা তিব্বতে শেল্টার বানানো শুরু করবে, বুঝতে হবে তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা (অব.) লুনজের এই উন্নয়নকে ভারতের জন্য “গুরুতর কৌশলগত হুমকি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এই শেল্টারগুলো চীনের বিমান ও সরঞ্জামকে ছড়িয়ে রাখতে, আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং দীর্ঘ সময় উচ্চভূমিতে অভিযান চালাতে সহায়তা করবে। এগুলো নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশ হামলা থেকেও ঘাঁটিকে সুরক্ষিত রাখবে।”
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, লুনজে ঘাঁটির রানওয়েতে চীনের সশস্ত্র CH-4 ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে। এই ড্রোনগুলো ১৬ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে এবং ছোট পাল্লার আকাশ-থেকে-ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম—যা পার্বত্য অঞ্চলে আক্রমণের জন্য কার্যকর বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
অন্যদিকে, এয়ার মার্শাল এস পি ধারকর (অব.) মন্তব্য করেছেন, “চীনের স্থায়ী অবকাঠামো ও আধুনিক ঘাঁটি নির্মাণ ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এক সময় ভৌগোলিক উচ্চতার কারণে আমাদের সুবিধা ছিল, কিন্তু চীনের দ্রুত আধুনিকীকরণ সেই ব্যবধান কমিয়ে এনেছে।”
ভারতীয় বিমানবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, লাদাখ, অরুণাচল ও তিব্বত অঞ্চলে চীনের এমন আগ্রাসী সামরিক অবকাঠামো উন্নয়ন শুধু আঞ্চলিক ভারসাম্যকেই নয়, বরং ভারত-চীন সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রতিযোগিতাকেও আরও তীব্র করে তুলছে।
© sangbad52 ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ