অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১২ অক্টবার ২০২৫, সময়ঃ ০৩:৪৬
বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ২৫ জন বর্তমান ও প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ (২০২৪ সালে সংশোধিত)–এর অধীনে এ পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তবে এ নিয়ে দুইজন বুদ্ধিজীবী দুটি প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। প্রশ্ন দুটি হলো—
১) মিলিটারি অফিসারদের মিলিটারি আদালতে না পাঠিয়ে আইসিটি বা অন্য কোনো সিভিলিয়ান আদালতে বিচার করা কি বৈধ?
২) নিম্ন অফিসারদের অপরাধের জন্য ঊর্ধ্বতন অফিসারদের গ্রেফতার করা কি যায়?
আইনি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, উত্তর হচ্ছে— হ্যাঁ, বৈধ।
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ—যেমন গুম, হত্যা, বা নির্যাতনের মতো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমসের ক্ষেত্রে সামরিক অফিসারদেরও সিভিল আদালতে, বিশেষ করে আইসিটিতে বিচার করা সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ।
আইসিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর সেকশন ৩ ও ৪ মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিশেষ জুরিসডিকশন স্পষ্ট করেছে। এ আইন সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করে।
২০২৪ সালের সংশোধনীতে enforced disappearances বা গুম-কে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই বিশেষ আইনি কাঠামোর কারণে আইসিটির এখতিয়ার আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২-এর ওপর প্রাধান্য পায়। ফলে এসব অপরাধের বিচার মিলিটারি কোর্টে করা বাধ্যতামূলক নয়।
এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ—যেমন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)-এর বিধানেও সামরিক কর্মকর্তাদের সিভিল ট্রাইব্যুনালে বিচারের অনুমতি রয়েছে।
উত্তর— হ্যাঁ, দায়ী।
আইসিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর সেকশন ৪(৩) (২০২৪ সংশোধনীসহ) অনুযায়ী, কোনো কমান্ডার বা উচ্চপদস্থ অফিসার যদি অধীনস্তদের অপরাধ সম্পর্কে জানতেন বা জানার কথা ছিল অথচ প্রতিরোধ বা শাস্তির ব্যবস্থা না নেন, তবে তিনি ওই অপরাধের জন্য দায়ী থাকবেন।
এই ধারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠিত কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি নীতির প্রতিফলন—যা আইসিসি’র আর্টিকেল ২৮-এর সরাসরি অনুসরণ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফর ইয়ুগোস্লাভিয়া (ICTY) ও রুয়ান্ডা (ICTR)-তেও এ নিয়ম প্রয়োগ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ২০২৪ সালের আইসিটি সংশোধনীকে স্বাগত জানিয়ে বলেছিল, এটি কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি ও ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটির সংজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে।
আইসিটির চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও তাঁর টিমের পদক্ষেপকে কেউ কেউ ‘গ্লোরি হান্টিং’ বা ‘ভেন্ডেটা’ হিসেবে দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আইন বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তাঁদের আবেদন আইনি, যৌক্তিক এবং প্রমাণভিত্তিক।
বাংলাদেশে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করলে রাষ্ট্রের আইনি কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে।
গুম বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে ন্যায়বিচারের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করা।
আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি অটল থেকে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এগিয়ে যেতে হবে, যাতে অতীতের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ প্রক্রিয়া কেবল ভুক্তভোগীদের ন্যায়ই দেবে না, ভবিষ্যতের অপরাধ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখবে।
© sangbad52 ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ