শিরোনাম:

বালু কাটার মেশিন ছাড়ল, বাল্কহেডের শ্রমিকদের কারাদণ্ড! প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন।

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বার ২০২৫ | সময়ঃ ০৮:২০
photo

সহিদ সুরুজ:

অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযানে রহস্যজনক ভাবে বালু কাটার মেশিন জব্দ না করে, বরং বাল্কহেডের সাধারণ শ্রমিকদের কারাদণ্ড দিয়েছে প্রশাসন। এতে উপজেলা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুন্সীগঞ্জ সদরের কালিরচর, চর আবদুল্লা ও কাওয়াদি এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন বিরোধী বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এসময় ইউএনও সদর, এসিল্যান্ড সদর, মুন্সীগঞ্জ থানা ও নৌ পুলিশের যৌথ টিম চারজন বাল্কহেড শ্রমিককে কারাদণ্ড দেন। অথচ বাল্কহেডের পাশেই থাকা বালু কাটার মেশিন অক্ষত অবস্থায় থেকে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মূল অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকদের শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি, বরং প্রকৃত অপরাধীরা প্রশাসনের ‘অদৃশ্য শক্তির’ আড়ালে থেকে গেল। তাদের দাবি, শ্রমিকদের শাস্তির পাশাপাশি বালু কাটার মেশিন জব্দ করলে অভিযান সফল ও কার্যকর হতো।
কালিচর, চর আবদুল্লা ও কাওয়াদি এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। স্থানীয়রা জানান, নদী থেকে বালু কাটার ফলে তাদের ভিটে-মাটি, কৃষিজমি ও বসতবাড়ি নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। নিজেদের ভিটে রক্ষায় তারা বারবার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, মানববন্ধন করেছেন, এমনকি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি প্রশাসন সত্যিই ব্যবস্থা নেয়, তাহলে কেন বালু কাটার মেশিন জব্দ করা হলো না? মূল অপরাধীদের বাঁচিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের শাস্তি দেওয়ার মানে কী?”
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারজানা আক্তার
বলেন, “সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার উপস্থিত ছিলেন, তার সঙ্গেই কথা বলতে হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ বাল্কহেড মালিক পরিবহন সংস্থার সভাপতি বোরহান মিয়া বুলু বলেন, “জেলা প্রশাসক বালুমহল ইজারা দিয়েছেন। আমরা সেখানে বালু কিনতে গিয়েছি। শ্রমিকরা কোনো অপরাধ করেনি, তবু তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি বালু কিনি, প্রশাসন আমাদের শাস্তি দেয়। আর না কিনলে বালুমহলের নেতারা হুমকি দেয়। এটি আমাদের প্রতি অন্যায় আচরণ। বালুমহল বন্ধ করে দিলে আমরাও বালু কিনবো না।”
এলাকাবাসীর দাবি, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সঠিক ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে প্রশাসনের অভিযান সত্যিই কার্যকর হবে। অন্যথায় শ্রমিকদের শাস্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা প্রশাসন যেন প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় এবং কৃষিজমি ও পৈতৃক ভিটে-মাটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করে।

শেয়ার করুন