অফিস ডেস্ক
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে ক্রমেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় বেলা ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। তাপমাত্রা দ্রুত নেমে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে পৌঁছেছে। কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ, দিনমজুর, নৌকা চালক, হাট–বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে।
অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহনকে। একই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ–তীরবর্তী এলাকায় নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মাঝিরা জানান, অতিরিক্ত কুয়াশায় দিকনির্দেশনা স্পষ্ট না থাকায় নৌকা চালানোই হয়ে উঠছে কঠিন।
গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি—ভাঙাচোরা কাঁচা ঘর দিয়ে ঢুকে পড়া হিমেল হাওয়া তাদের দৈনন্দিন জীবনে বাড়িয়ে দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। সীমিত আয়ের মানুষজন শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য হারিয়ে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
রাজিবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল কাদের জানান, আগেভাগেই শীত নেমে আসায় কষ্ট বাড়ছে। তিনি বলেন, “যা আয় করি, তা দিয়ে শীতের কাপড় কিনতে পারছি না। ঠান্ডায় ক্ষেতে কাজ করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”
কুড়িগ্রাম পৌরসভার রিকশাচালক মশিউর বলেন, “ঠান্ডায় মানুষ রাস্তায় কম বের হয়। তাই ভাড়াও মিলছে না। যাত্রী না হলে সংসার চলবে কীভাবে?”
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সর্দি–কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, শুক্রবার সকাল ৬টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আগের দিন ছিল ১২.৪ ডিগ্রি। এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে এবং আগামী এক সপ্তাহও এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুল মতিন জানান, সব উপজেলা মিলিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য ছয় লাখ টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। খুব দ্রুতই তা জেলার নয়টি উপজেলার শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।