ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর মিয়ানমার থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। যা খরচসহ কেজিপ্রতি ৪২ টাকা কেনা পড়েছে।
কিন্তু এ পেঁয়াজ আমদানিকারকরা পাইকারি বাজারে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রয় করেছে।
এভাবে ১৫৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আমদানিকারকরা। খুচরা পর্যায়ে এ টাকা ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা সাধারণ ক্রেতার পকেট থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এমন তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।
অতি মুনাফার সেই পেঁয়াজ এখন মিলছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের পাশ্ববর্তী কর্ণফুলী নদীতে। শুধু তাই নয়, মিলছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়েও। যার সত্যতা স্বীকার করেছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক সৈয়দ আহমদ সফা মাতব্বর।
তিনি বলেন, পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। এমনকি ফিরিঙ্গীবাজার ব্রিজঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীতেও ফেলে গেছে ৭-৮ বস্তা পচা পেঁয়াজ।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালেও ময়লার ভাগাড় থেকে এসব পঁচা পেয়াজ সরাতে হচ্ছে। তবে কে বা কারা এসব পঁচা পেঁয়াজ ফেলে গেছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
তিনি বলেন, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে ময়লার ভাগাড়ে রেখে যাওয়া অন্তত ১০ টন পেঁয়াজ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধে এলাকার লোকজন থাকা দায় হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন এসব পেয়াজের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে নগরবাসীর মধ্যে।
অনেকের মন্তব্য, অতি মুনাফার লোভে গুদামজাত করা পেঁয়াজ এখন পচে নষ্ট হচ্ছে। মুনাফার লোভে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি না করে, সেই পচা পেঁয়াজ এখন ফেলা হচ্ছে ময়লার ভাগাড় ও কর্ণফুলী নদীতে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পঁচা হওয়ায় তারা সেগুলো ফেলে দিচ্ছেন। এ কারণে তাদের ব্যাপক লোকসান হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক জাগরণকে বলেন, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বোটে পানি লেগে নষ্ট হয়েছে। পচা পেঁয়াজ বিক্রি করার সুযোগ নেই। তাই আমদানিকারক নিজেই সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ে ফেলে গেছেন।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি আফসার উদ্দিন বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় একটা অংশ পঁচা। যার কারণে পচা পেঁয়াজ বাদ দিয়ে ভালগুলো বেশি দামে বিক্রয় করতে হয়েছে। এরপরও পচে যাওয়ায় আমদানিকারকরা বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতা বন্ধ করার পর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদনি পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না- এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন, ফলে আবারও ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি।
এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তৃতায় পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি করার কারণ হিসেবে দেখছেন সংশিষ্টরা। পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়, মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরও উসকে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
এরপর ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। বুধবার ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়।
বৃহস্পতিবার সেই দাম আরও বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। শুক্রবার কোথাও কোথাও তা আরও বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছে। এর আগে কখনও দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।