সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজদিখানে খেলার মাঠ বেদখল হওয়ার পথে, উদ্ধার ও সংস্কারের দাবী এলাকাবাসীর। উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের মালখানগর গ্রামের ষোলআনী মাঠটি ৫১ শতাংশ জায়গা নিয়ে প্রায় দেড়শ বছর ধরে ইতিহাস বহন করছে। সেসময় জমিদারদের ৪ টি পরিবার মাঠের জায়গাটি এলাকাবাসীর ছেলে-মেয়েদের খেলা-ধুলা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য দান করেছেন।
মালখানগর গ্রামের (মাঠে খেলারত) কিশোর শ্যামল, নাজমুল, অভি, মুন্না, বাধন, আপন, শ্রাবন ও সৈকত জানায় তারা মালখানগর স্কুলের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণির ছাত্র ২০/২৫ জন এই মাঠে খেলা ধুলা করে। সাথে তাদের কিছু বড় ভাইয়েরাও মাঝে মাঝে খেলে। গত ৮ মাস আগে মাঠেবালু পাথর রাখে ঠিকাদার তখন থেকে খেলা ধুলা বন্ধ। গত ২ মাস আগে মাঠ পরিস্কার করে নিলেও ঠিকাদার মাঠে চুলা বানিয়েছিল পিচ গালাতে সেই গর্ত ঠিক মত ভরাট করে নাই। পাথর গুলো পরিস্কার করে নাই। খেলতে গিয়ে পরে হাটু ছিলেছে। অনেকে ব্যাথা পেয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গর্ত খেলাধুলা করা যায়না। আবার মাঠের উত্তর পাশে আউয়াল জীহাদরি বাড়ি তারা বাড়িতে অটো চার্জ দেয় মাঠের ১৫ ফিট জায়গা প্রস্থে রাস্তা বানিয়ে শুরকি (ইটের গুরো) ফেলেছে। রশীদ নামে আরেক বাড়ি তারা মাঠের ভীতর বাশ দিয়ে মাচা করে কাপড় লাকড়ী শুকায়। মাঠের পুর্ব পাশে নজরুল ডেকোরেটর মালিক বাশ দিয়ে আড়া বানিয়ে কাপড় শুকায়। রাতে বাস ট্রাক মাঠে রেখে নষ্ট করে ফেলেছে। এখন আমরা এক কোনায় খেলি। আগের মত মাঠে খেলতে পারি না।
এলাকাবাসী মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব দেওয়ান জানান এখানে বেশির ভাগ কিশোররা খেলাধুলা করে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রয়োজন। বর্তমান মাঠটির যে বেহাল দশা ছেলেরা খেলাধুলা করতে পারছে না। আগে এখানে হাডুডু খেলা, যাত্রাপালা, সার্কাস হতো হাজার হাজার মানুষ খেলা উপবোগ করতো। মাঠটি এখন খালী পরে থাকে।
স্কুল শিক্ষক মুকুল গোস্বামী বলেন, আমরাও এ মাঠে খেলেছি। মাঠটি বেদখল থেকে মুক্ত করতে হবে। মাঠটি ঠিক করে খেলার উপযোগী করা দরকার। শিশু কিশোররা মাঠে খেলতে পারছে না খানা খন্দ। সমাজের বিত্তবান, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনের নজরদারী দরকার।
বাদশা মাদবর বলেন এ মাঠে ৪০/৫০ বছর আগে আমরা হাডুডু খেলেছি। কত অনুষ্ঠান মেলা এ মাঠে হয়েছে। এ জেলায় ষোল আনী মাঠ বললে কে না চিনত এখন মাঠের কি অবস্থা। কেউ ব্যবসার কাজে মাঠ ব্যবহার করে। কেউ বাড়িতে যাওয়ার জন্য মাঠের উপর ১৫ ফিট প্রসস্থ রাস্তা করে ফেলেছে বাড়িতে গাড়ি প্রবেশের জন্য।
ফেন্ড্স এসোসিয়েশন অব মালখানগর সংগঠনের সভাপতি আশরাফুজ্জামান সোহেল জানান, মাঠটিতে ইট বালু পাথর রেখে নস্ট করেছে মোজাম্মেল হোসেন পিন্টু ঠিকাদার। কাজ শেষে ঠিকাদারের লোকজনকে ভাল করে পরিস্কার করে দেওয়ার কথা বললেও তারা করেনি। আবার মাঠ দখল করে রাস্তা বানিয়ে রেখেছে। কে বাধা দিবে সংশ্লিষ্ট প্রসাশন বা জেলা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। আমরা অনেকে বাধা দিয়েছি কে শোনে কার কতা উল্টো মনমালিন্যতা। এ মাঠ ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরা আজ করুন অবস্থা। এ মাঠে ফুটবলার কাঞ্চন ও বখতিযারসহ কত নামি-দামি খোলোয়ারা খেলেছে। আজ মাঠের বেহাল দশা। মাঠটি দখলমুক্ত ও সংস্কার করা অতি জরুরী।
এ ব্যাপারে ডেকোরেটর ব্যবসায়ী নজরুল জানায় আমি আমার বাশ-কাঠ যা কিছু মাঠে আছে সরিয়ে নিব।
আব্দুল আউয়াল জিহাদী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা মাঠ দখল করেন নাই, বাড়ি থেকে মাঠের পাশ দিয়ে তারা যাতায়াত করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী সোয়াইব বিন আজাদ বলেন, ঠিকাদারকে বলেছি। এত দিন হয়ে গেলো এখনো ঠিক করেনি?
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি এখন শুনলাম আগে কেউ আমাকে বলেনি। তবে কেউ দখল করে রাখলে আগে তাদের জিজ্ঞেস করব। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।