গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ময়লার স্তূপের পাহাড়

নিউজ ডেস্ক | সংবাদ ৫২ .কম
আপডেট : ০৬ আগস্ট, ২০১৯
ক্যাটাগরি :
পোস্টটি শেয়ার করুন
ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। আর এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের মধ্য দিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সেখানে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ভয়ঙ্কর সব জীবাণু দ্বারা নিজেদের আবৃত করে রেখেছে। তার পাশাপাশি ময়লার স্তূপের পাহাড় গড়ে তুলেছে দিনের পর দিন। যার ফলে প্রতিদিন আগত এক রোগের রোগী এসে আক্রান্ত হচ্ছে আরও বহুবিধ রোগের দ্বারা।  

এই হাসপাতালের নোংরা ও অপরিষ্কার টয়লেটে যেতে হয় নাক চেপে। হাসপাতালে আগত রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রাকৃতিক কাজে যেতে হয় মসজিদ অথবা নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনের বাসায়।  

এদিকে, এই হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীরা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসারত। এবং তারা বলছেন- নর্দমা ও উচ্ছিষ্টের গন্ধে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। 

একাধিক আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, এখানে দুর্গন্ধে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সরকারি জেলা হাসপাতাল এমন ভয়ানক নোংরা পরিবেশ এর আগে আর দেখিনি। কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়, সেখানে একজন রোগী কিভাবে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হবে বলে মনে হয়। 

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বি–১৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিতে এসেছেন আব্দুল মান্নান। তার সঙ্গে আসা আইয়ুব আলী বলেন, দুই দিন হলো ভর্তি করা হয়েছে। এখানে যে ভয়ানক নোংরা ও বিষাক্ত আবর্জনাযুক্ত ড্রেনের দুর্গন্ধের কারণে কোন কিছুই মুখে দিতে পারছি না। বাড়ি থেকে কেউ আসলে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এখানে আসার পর থেকে রোগীর সাথে আমি নিজেও কয়েকবার বমি করেছি।

বি–১৩ নম্বর বেডের রোগী বৃদ্ধা জাহেদা বেগমকে (৬০) কাঁচা কলা দিয়ে ভাত খাওয়ানোর অবিরাম চেষ্টা করছেন তার মেয়ে কাঞ্চন বিবি। কিন্তু বৃদ্ধা কিছুতেই খাবে না। কাঞ্চন বিবি বলেন, সদরের লক্ষিপুর ইউনিয়নের খামার গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে এসেছেন মা'র চিকিৎসা'র জন্য। তিনি বলেন, এই গন্ধের কারণে বারবার বমি করছে মা। নোংরা পরিবেশের কারণে ভাল হওয়ার পরিবর্তে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরছে। দুদিন থেকে আমি নিজেও কিছু মুখে দিতে পারছি না। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তখন দুপুর দেড়টা। দেখা গেল, নিচতলার পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে আছে অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনরা। পাশে চোখ রাখতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম ভয়ংকর একটি নর্দমার ১ হাত দূরের প্রতিবেশি হিসেবে। রোগ-জীবাণুর অন্যতম অভয়াশ্রম ও পুরো হাসপাতালের দৃশ্যমান বিবেচনায় মনে হলো।

ইমারজেন্সি রুমের দৃশ্য আরও ভয়াবহ। কিছু বহিরাগত ও আউটসোর্সিং এ ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ওয়ার্ড বয়দেরকে বিভিন্ন ধরনের ড্রেসিং, সেলাই, হাত–পা ভেঙে যাওয়া রোগী'র চিকিৎসা দিতে দেখা গেল। সেই ইমারজেন্সি রুমের বারান্দার বেডে পায়ের কেটে যাওয়া অংশে সেলাইয়ের কাজ করছে বহিরাগতরা। দেখা গেল, রোগী যে বেডে শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে ঠিক সেই বরাবর ফেলে দেয়া হলো রক্তাক্ত গজ, কাপড়, তুলাসহ। রোগীর ড্রেসিং এর ব্যান্ডেজ ও অন্যান্য ব্যবহৃত বর্জ্য দিয়ে ভরে গেছে এই ওয়ার্ডের চারপাশ।

হাসপাতালে একাধিক রোগী অভিযোগ করে বলেন, গাইবান্ধা সদরের ১৩টি ইউনিয়ন ছাড়াও সাত থানার মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো সদর হাসপাতালটি। কিন্তু হাসপাতালের এমন বেহালদশায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ২০ জনের। কিন্ত ভর্তি রয়েছে ২১ জন রোগী।
আবার গাইনি ওয়ার্ডের বেড সংখ্যা ২০টি। কিন্ত বর্তমানে রোগী মেঝেতে গাদাগাদি করে ভর্তি রয়েছে ২৬ জন। তাদের প্রত্যেকের অভিযোগ এই ওয়ার্ডে দুর্গন্ধের কারণে দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না।

পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ এর বিধিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সকল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের বিধান রয়েছে। কিন্তু গাইবান্ধার সকল হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলো অলিতে-গলিতে গড়ে উঠলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল বর্জ্য প্রক্রিয়া, পরিশোধন ও ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর ও যুগোপযোগী কোন ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়নি।

হাসপাতালের এই করুন অবস্থা ও ভয়াবহ নোংরা পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা এবং হাসপাতেলের গ্রিল, দরজা–জানালা ভেঙে গেছে। ফ্যান ভেঙে রোগীর মাথায় পড়ছে এমন প্রশ্নের উত্তর হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান জাগরণ'কে বেশি কিছু জানাতে পারেননি। তবে ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম হানিফ দুঃখ করে বলেন, এখানকার অবস্থা আগে থেকেই খুব ভালো ছিল না। তবে এত ভয়াবহ অবস্থা আপনি না জানালে হয়তো জানা যেত না। তবে তিনি এ ব্যাপারে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন।


Comments



 

সৌদি আরবের একটি বিখ্যাত…

মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সৌদি আরবের একটি বিখ্যাত…

মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

মেঘনায় বাংলাদেশ হেলথ…

মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সৌদি আরবের একটি বিখ্যাত…

মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে…

মঙ্গলবার, ০৬ আগস্ট, ২০১৯

মেঘনায় বাংলাদেশ হেলথ…

মঙ্গলবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

সুনামগড় দিরাইয়ে আওয়ামীলীগের…

বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২

বিদ্যুৎ ইউনিট বাড়ার…

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

চেয়ারম্যান ময়না সুস্থতা…

শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩

বাকেরগঞ্জে ৪টি ইউনিয়ন…

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

বাকেরগঞ্জে ৪টি ইউনিয়ন…

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

রানীশংকৈলে অসমাপ্ত ড্রেনের…

সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯

লৌহজংয়ের বৌলতলী ইউনিয়ন…

শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২০

কুমিল্লায় বিধবা ও দুই…

শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৩

জরিপ

বাংলাদেশের জনগণ কখনো ভুল ভোট দেয় না, তাই এসব নিয়ে যুক্তরাজ্যের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।—পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এই বক্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত?

মন্তব্য নেই
না
হ্যাঁ

নামাজের সময়সূচি

১৬ নভেম্বর, ২০২৪
ফজর৫:২০
জোহর১২:১২
আসর৪:৪৩
মাগরিব৫:৪৯
ইশা৭:০১
সূর্যাস্ত : ৫:৪৯সূর্যোদয়: ৬:৩৭