মুন্সীগঞ্জে সদর উপজেলায় ফসলি জমিতে মাটি ভরাটের মহাউৎসব চলছে
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন মানিক
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ফসলি জমিতে মাটি ভরাটের মহাউৎসব চলছে। এ দুটি ইউনিয়ন হচ্ছে সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন ও আধারা ইউনিয়ন। এ দুটি ইউনিয়নে বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা এ মাটি ভরাটের কাজে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মাটি ভরাটের কাজে আড়গোড়া তৈরি করতে গিয়ে রাস্তার পাশে সরকারি গাছ কেটে ফেলেছে জনৈক জনপ্রতিনিধি। এমনটি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় এলাকাবাসী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এখানে স্থানীয়রা কোন ধরণের সরকারি অনুমতি ছাড়াই ফসলি জমির শ্রেণি পরির্বতন করে ফেলেছে।
আধারা ইউনিয়নের শেষ সীমান্তের উত্তর দিকে সোলারচর গ্রামের পূর্বদিকের বিশাল এলাকা নিয়ে আলুর জমিতে পাশাপাশি দুটি স্থানে মাটি ভরাটের লক্ষে আড়গোড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি রাস্তার পাশে থাকায় এখানকার সরকারি একটি গাছও কেটে ফেলা হয়েছে মাটি ভরাটের সুবিধার লক্ষে। এ জমিটির মাটি ভরাটের কাজ করছেন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সালামতউল্লাহ। তিনি এখানকার মাটি ভরাটের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত বলে খবর পাওয়া গেছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অত্র এলাকায় জমিতে পানির আগমন ঘটলে তখন এ জমিগুলো মাটি ভরাট করা হবে। এমনটি খবর পাওয়া গেছে এলাকায় ঘুরে। আর সেই লক্ষে আগম প্রস্তুতি হিসেবে এখনই জমিতে মাটি ভরাটের সুবিধায় আড়গোড়া তৈরি করে রাখা হচ্ছে ভবিষতের আশায়।
সোলারচরের দক্ষিণ দিকে আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারাণ সম্পাদক সুরুজ মিয়া সাবেক মেম্বারের বাড়ির পশ্চিম দিকে এমনিই একটি জমিতে মাটি ভরাটের লক্ষে আড়গোড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরি করেছেন এখানকার বসতি বাছিরউদ্দিন বেপারি।
এদিকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামে একটি ফসলি জমি সম্পূর্ণভাবে মাটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এ জমিটি ভরাট করছেন সামাদ মোল্লার ছেলে মিনহাজ মোল্লা নামের এক লোক। মিনাজের ছোট ভাই মিলন মোল্লা নিজে থেকে এখানে মাটি ভরাটের কাজ করেছেন। তবে এ বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এখানে মিডিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে মিলন মোটর সাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। এখানে ১৬ শতাংশ জমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে।
একই ইউনিয়নের রাজারচর এলাকার কবরস্থানের দক্ষিণ দিকে দুটি ফসলি জমি মাটির ভরাটের লক্ষে ইতোমধ্যে আড়গোড়া তৈরি করা হয়েছে। এ জমি গুলোর প্রাকৃতিক অবস্থানও পাশাপাশি রয়েছে। এখানকার একটি জমিতে মাটি ভরাট করছেন এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা আওলাদ বেপারি। তিনি এখানে ১৮ শতাংশ জমিতে মাটি ভরাটের কাজ হাতে নিয়েছেন। অন্যদিকে এখানকার আল আমিন মেম্বারের ভাই আলমগীর অপর জমিটি ভরাটের কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানকার এ দুটি জমিতে মাটি ভরাটের কাজে সিন্ডিকেটের সাথে আল আমিন মেম্বার জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সালামত বলেন, সোলারচরের জমিটি তিনি কিনে নিয়েছেন। আর সেখানে মাটি ভরাটের কাজ করা হবে। তবে সেখানে গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
সোলারচরের বাছিরউদ্দিন বেপারির ছেলে বলেন, এখানকার অনেক জমিই ইতোমধ্যে মাটি ভরাট করা হয়েছে। তখনতো এখানে কিছু হয়নি। তাই এখানে আমরা মাটি ভরাটের কাজ করছি।
রাজারচরের আওলাদ বেপারি বলেন, এ বিষয়ে সাবেক মেম্বার ্আল আমিন বলতে পারবে। তিনি আমার জমিতে মাটি ভরাটের কাজটি দেখভালোর কাজ করছেন।
মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আল আমিন বলেন, আমার ভাই সাবেক মেম্বার আলমগীরের মেয়ের বিয়ে চলছে। এখন ব্যস্ত আছি। তাই এখন কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।
মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আলমগীর বলেন, এখানে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হলে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। সেই লক্ষে এখানে কাজ করা হচ্ছে।
মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের তহশীলদার আরিফ হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। মিনহাজ য়েখানে মাটি ভরাটের কাজ করছিলো সেখানে মাটি ভরাটের পাইপ খুলে ফেলা হয়েছে। সেখানে একটি সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছিল। তাও খুলে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে তিন জায়গাতে মাটি ভরাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকে ভূমি অফিসে আসার জন্য বলা হয়েছে। তারপরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আধারা ইউনিয়ন পরিষদের তহশীলদার আলমগীর সোলেয়মান বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিধি অনুযায়ি।
মুন্সীগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আতাউর রাব্বি বলেন, ফসলি জমিতে কেউ যদি মাটি ভরাটের চেষ্ঠা করে, তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে।