সরিষাবাড়ীর পোগলদিঘা ইউনিয়নের একাধিক কর্মসৃজন প্রকল্পের অনিয়মে চরম ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া বা অনিয়মে এলাকাবাসী চরম ক্ষুদ্ধ ও হতাশ।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির ২০২২-২৩ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের গেন্দারপাড়া মোস্তফা মেম্বারের বাড়ী হইতে বৈশেরচর পাকা রাস্তা সংলগ্ন বাদশা মিয়ার পুকুর পাড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৯লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। ৫৮ জন শ্রমিক ৪০দিনে রাস্তা সংস্কারে কাজ করার কথা থাকলেও কোন কাজ হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গেন্দারপাড়া গ্রামের আজমত আলী, বৈশেরচর গ্রামের সুরুজ মিয়া, গৃহবধু মিনা বেগমসহ অনেকেই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই রাস্তায় কোন কাজ হয় নাই। কাজ করতে একটা লোকও দেখি নাই। আমারা কিছু জানিনা। এ বিষয়ে কয়ও না। লোক থাকলে তো কাজ করলেতো দেখলামনি। রাস্তার পাশেই আমাদের বাড়ী।
এ ছাড়াও গত অর্থবছরে ইউনিয়নের গোবিন্দপটল গ্রামে ৫নং ওয়ার্ডের আজাহারের বাড়ী হইতে ৭নং ওয়ার্ডের ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসী। গ্রামের আলামিন, আঙ্গুরী বেগম, মজিবর রহমান, নায়েব আলী, সিদ্দিক মিয়া, ভ্যান চালক সোহেল মিয়া, গাছবয়ড়া গ্রামের তছলিম মিয়া, ছানোয়ারা বেগমসহ অনেকেই বলেন, ১৫/১৬ জন লোক ঈদগাহ মাঠ হইতে গাজীর বাড়ী পর্যন্ত ১০/১২ দিন কাজ করছে। বাকী রাস্তায় কোন মাটি কাটা হয়নি বলে তারা জানান। তবে মনি মিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, রঞ্জু মিয়া, বৈশেরচর গ্রামের সুরুজ মিয়াসহ গ্রামের অনেকেই বলেন, রাস্তা ২বার মাপা হইছে। কাজ করে নাই। তারা (চেয়ারম্যান-মেম্বার) দেখতেও আসেনা বলে অভিযোগ করেন। ইউনিয়নের ৪নং ওয়র্ডের পুঠিয়ার পাড় ও মোনার পাড়া বিলাত আলী মন্ডলে বাড়ির মোড় হতে বগারপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প পর্যন্ত রাস্তার সংস্কার কাজ নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ ছাড়াও ইউনিয়নের পুটিয়ার পাড়, মোনার পাড়া, জামতলী এলাকায় রাস্তা সংস্কারের কোন কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। গত ২০২২-২৩ ইং অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পর কাজ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন এলাকাবাসী। সরকারী অর্থের যথাযথ ব্যবহার না করে নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে সিংহ ভাগ অর্থ নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন সচেতন মহল। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জোরালো হচ্ছে বলে জানা যায়।
ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মোস্তফা ম্যাম্বার বলেন, ২২-২৩ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে কাজ হয়নি। তবে গত এক সপ্তাহ যাবৎ এমপি’র বিশেষ বরাদ্ধে কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ইউনিয়নের ৫, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ম্যাম্বার নূরী বেগম বলেন, ঐ রাস্তায় দুই বার বরাদ্ধ এসেছে। মনে হয় ৬০জন শ্রমিকের মধ্যে ৩০জন শ্রমিক ১৫/২০ দিন কাজ করেছে।
ইউনিয়ন প্রকল্পের ট্যাগ অফিসার রুহুল আমিন বেগ বলেন, আমিতো জানি কাজ হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আশরাফুল আলম মানিক মুঠো ফোনে বলেন, ৪০দিনের কর্মসূচীর মাটি কাটা হয়েছে। স্থানীয়দের অল্প মাটিকাটার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তবে কি মাটি কেটে পাহাড় করবো ? এলাকার লোকজন বললেই তো হবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীরের নিকট প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রকল্পের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পরে বক্তব্য দেয়ার আশ্বাস দিলেও তিনি সংবাদ মাধ্যমের সাথে কোন কথা বলেননি।