সাতক্ষীরা তালার সুভাষিনী ভূমি অফিসে চুক্তির ঘুষ-ই যেন সরকারি সেবা  সাতক্ষীরা তালার সুভাষিনী ভূমি অফিসে চুক্তির ঘুষ-ই যেন সরকারি সেবা 

নিউজ ডেস্ক | সংবাদ ৫২.কম
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
Sangbad52

সাতক্ষীরা তালার সুভাষিনী ভূমি অফিসে চুক্তির ঘুষ-ই যেন সরকারি সেবা 

সাতক্ষীরা তালার সুভাষিনী ভূমি অফিসে চুক্তির ঘুষ-ই যেন সরকারি সেবা 

মোঃ রিয়াজ উদ্দীনঃ-

----------------------------

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সুভাষিনী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নায়েব ও অফিস কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের সীমাহীন অভিযোগ উঠেছে। সূত্রে জানা যায়, ভূমি অফিসটি সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মাঝ বরাবর হওয়ায় দিন দিন এখানে জনবসতি গড়ে উঠছে। ফলে জমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম ও তুলনা মূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এই সূত্রকেই কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, অফিসের কর্মচারী ও দালাল চক্র দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুললেও কিছুতেই প্রতিকার পাচ্ছে না এ অঞ্চলের মানুষ। অফিসটি ১৭টি মৌজার আওতাধীন হলেও ১০টি বিআরএস গেজেট প্রকাশ পেয়েছে অবশিষ্ট ৭টি মৌজা এসএ রেকর্ড এর উপর খাজনা নেয়া কার্যক্রম চলছে। সরজমিনে গিয়ে কল্পনার চেয়ে বাস্তবের রূপ আরো বেশি ভয়ংকর সেটাই দৃশ্যমান হয় যা দেখলে সকলকে রীতিমতো অবাক হতে হয়। অর্পিত সম্পত্তি উচ্চ আদালতের রায় পাওয়ার পরেও মোটা অংকের অর্থ দাবি, টাকা না পেলে মিউটেশনের তদন্ত রিপোর্ট আটকে রাখা, বিলান সম্পত্তি ডাঙ্গা দেখানো, স্বল্প টাকার খাজনার পরিবর্তে মোটা অংকের টাকা হাতানো, স্টাফদের দাবিকৃত অর্থ কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সম্পত্তি পূর্বের ভিপি সম্পত্তি বলে আটকে রাখা, সম্পত্তির মালিকের নিকট হইতে ক্রয়ের পর মিউটেশন ও খাজনা দেয়া থাকলেও তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে তালবাহানা দেখিয়ে ঘুরানো, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত “ফি”র পরিবর্তে কন্ট্রাকের মাধ্যমে নামজারী করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর এ সকল ঘুষ বাণিজ্য ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) মোঃ ইকরামুল বিশ্বাস সুকৌশলে তার অফিস সহায়ক মাহবুব হোসেন কে দিয়ে করিয়ে আসছেন। মাহবুব হোসেন এই অফিসে দীর্ঘ ০৩ বছর ০৩ মাস ধরে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলার মাধ্যমে এভাবে অপকর্ম চালিয়ে গেলেও রহস্যজনকভাবে এখান থেকে বদলী হয় না। তার হাত এতটাই শক্তিশালী যে সকল অপরাধ ধামাচাপা দিতে তার কয়েক মিনিটের কাজ। তাকে কেউ ঘুষ না দিলে সরকারি কোন সেবা পান না। তাই সেবা গ্রহীতাদের বাধ্য হয়ে তাকে ঘুষ দিয়ে নামজারী করাতে হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অর্থ ছাড়া কোন সেবা মেলে না সুভাষিনী ভূমি অফিসে সেবা গ্রহীতাদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে সেবা গ্রহীতাদের সম্মুখে ঘুষ গ্রহণ ও চুক্তি করতে দেখা যায়। অফিসে উপস্থিত সেবা গ্রহীতার সামনে ২০০ টাকা চেয়ে না দিতে পারায় অফিস সহায়ক মাহবুব আমাকে টাকা না দিলে ফাও কাজ করার সময় নেই বলে এড়িয়ে যান। বেশ ক'জন সেবা গ্রহীতার মধ্যে লক্ষণপুর মৌজার সার্ভেয়ার নূর আলী মাহমুদ বলেন, আমি নিজে নামজারীর রিপোর্ট করাচ্ছি তারপরও এখান থেকে রিপোর্ট নিতে গেলে কেসসহ ১৫০০/(দেড় হাজার) টাকা দেয়া লাগবে। সর্বমোট ৫/৬ হাজার টা লাগবে। তাছাড়া এই অফিসের এক চিহ্নিত দালাল সিন্ডিকেট চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে বলেন, সবাই জানে এখানে কেস বুঝে টাকা লাগে, বড় কেস হলে বেশি টাকা ছোট কেস হলে কম টাকা! সবকথা বলতে নেই বাজান। টাকা না দিলে এখানে কাগজে স্বাক্ষর হয় না। এই অফিসে প্রতি দলিলের জন্য ১হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা গুনতে হয়। আমি এখানকার পরিচিত সব সময়ই কাজ করাই তাও আমার ৫টি কেসের জন্য ৫০০০(পাঁচ হাজার) টাকা দিয়েছি। তাছাড়া আলাদা করে নায়েবকে ২০০০ হাজার দিয়েছি। অপরিচিত মানুষ হলে তো ৮-১০ হাজার টাকাও লেগে যায়। এই ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পর উপজেলা ভূমি অফিসের পেশকারকে টাকা, সার্ভেয়ারকে টাকা, অফিস সহকারী কে টাকা, পিওনকে বাধ্যতামূলক আলাদা করে টাকা দিতে হবে। টাকা ছাড়া কেউই কাজ করে না কোন কাগজে সই করে না এমন চাঞ্চল্যকর বক্তব্যের রহস্য উন্মোচন করতে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ ইকরামুল বিশ্বাসকে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও দেখলে তিনি বলেন, টাকা নিয়েছে তাই কি হয়েছে? আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এমনটা আশা করছি। উক্ত অফিসে ঘুষ না দিতে পারায় হতদরিদ্র, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ এখন নাজেহাল হয়ে পড়ছে। আজ তারা সরাসরি সেবা থেকে বঞ্চিত এমন প্রশ্নে তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেনকে ফোন করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, সাংবাদিকদের ভূমি অফিসে কাজ কি? বার বার কোন উদ্দেশ্য কেন ভূমি অফিসে যাবেন বলে ফোনটি কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। কিন্তু এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমিন মুঠোফোনে অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।