শ্রীনগর (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি: শ্রীনগরে জনতা ব্যাংক ভাগ্যকুল শাখায় অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে শাখার ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার ও কর্মচারী (এসসিটি) বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার অনিয়ম ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগে সঞ্চয় হিসাবের (জেবিডিএস) শতশত গ্রাহক লিখিত অভিযোগ নিয়ে ভীড় জমান ব্যাংক চত্বরে। গ্রাহকরা ওইদিন ব্যাংকে অডিট করতে আসা বিভাগীয় (দক্ষিন) কার্যালয়ের এজিএম কামালউদ্দিনের কাছে অভিযোগ পত্র দেন। অভিযোগকারীরা বলেন, ব্যাংকের ম্যানেজার (এসও) মোঃ মাসুদ, সহকারী ম্যানেজার মুনসুর ও কর্মচারী মোবারকের কারসাজিতে এই অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন তারা। অন্যদিকে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে গ্রাহকদের মাঝে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। আরেক অডিট অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগপত্র পেয়েছি। বিভাগীয় কার্যালয়ে তা তদন্তের জন্য দাখিল করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক ভাগ্যকুল শাখায় প্রায় ১ হাজার জেবিডিএস সঞ্চয় হিসাব রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের সঞ্চয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না গ্রহকরা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন কয়দিন পরে আসুন একটু ঝামেলা আছে ইত্যাদি তালবাহানা করে এসসিটি মোবারকের সাথে কথা বলতে বলেন। সঞ্চয় গ্রাহকরা পরিস্থিতির স্বীকার মোবারকের সাথে কথা বললে মোবারক কিছু খরচপাতি দিলে সঞ্চয়ের টাকা অল্প সময়ে উঠানো যাবে বলে দিক নির্দেশনা দেন। এতে করে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ও প্রবাসীরা ঘুষ দিয়ে সঞ্চয় হিসাব থেকে তাদের টাকা উত্তোলন করতে হচ্ছে বলে জানাযায়।
আরো জানাযায়, মোবারক অনত্র কোন শাখায় বদলী হলেও দুই এক মাস পরেই ভাগ্যকুল জনতা ব্যাংক শাখায় রহস্যজনকভাবে পুনরায় চলে আসে! ঘুরে ফিরে এই শাখায় প্রায় ২৫-২৮ বছর যাবত চাকুরী করে আসছেন তিনি ব্যাংকের অপর এক সূত্রে জানাযায়। কর্মচারী মোবারকের মাধ্যমে অনেকদিন যাবত চলছে তাদের এই ঘুষ বাণিজ্য।
গ্রাহক মমতাজ (সঞ্চয় হিসাব নং-২৯) দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠাই। তাদের কষ্টের অর্জিত টাকায় এই ব্যাংকে জেবিডিএস করেছি। আমার সঞ্চয় হিসাবের মেয়াদ শেষ হলেও ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে টাকা উত্তোলন করতে হয়েছে। জাহানারা পারভীন বলেন, আমার ভাবির সঞ্চয়ী হিসাবের মেয়াদ শেষ হলে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলি। সে রহস্যজনকভাবে একটু ঝামেলা আছে বলে কিছুদিন পরে আসতে বলেন। তার কিছুদিন পরে সহকারী ম্যানেজারের কাছে গিয়ে টাকার বিশেষ প্রয়োজন বলে কিছু খরচপাতি দেয়ার আশ্বাষ দিলে তিনি মোবারকের কাছে ৫ হাজার টাকা রেখে যেতে বলেন। এরিই ধারাবাহিকতায় আমি ৫ হাজার টাকা রেখে যাই। পরেদিন ব্যাংকে আসলে ম্যানেজার আমাকে ৪ হাজার টাকা কেন রেখে গেলাম প্রশ্ন করেন। এবিষয়ে মোবারক রাতে আমাকে ফোন করে বলে ম্যানেজারের কাছে ৫ হাজার টাকা কথা জানিয়েছেন কেন? তিনি আরো জানান, রানু বেগমের (সঞ্চয় হিসাব-৩৭) তার বাবদ ২৪০০ টাকা আমি সরাসরি সহকারী ম্যানেজার মুনসুরকে দিয়েছি। এছাড়াও ফাহিমা, মেহেরুন নেচ্ছা, রাসেদা বেগম, মাকসুদা, নিহার, আমেনা, ফকরুল, হালিমাসহ আরো অনেকেই ব্যাংকের অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে একই রকম অভিযোগ করেন। তারা সবাই বলেন, সর্বোচ্চ ৫০০০ হাজার ও সর্বনি¤œ ১৫০০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে তাদের।
ব্যাংকের এসসিটি মোবারকের কাছে জানতে চাইলে টাকা আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ব্যাংকের একজন কর্মচারী। তাদের (স্যারদের) নির্দেশ ছাড়া আমি কিছু করতে পারিনা?
রোববার সকালে জনতা ব্যাংক ভাগ্যকুল শাখার ম্যানেজার মোঃ মাসুদের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজও ব্যাংকে অডিট চলছে। আমি এখন কথা বলতে পারবো না।