অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১৫ অক্টবার ২০২৫, সময়ঃ ০৬:২৯
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় অটো ও মিশুক দৌরাত্মে মুন্সীগঞ্জ শহরের নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বাড়ছে অনাকাংখিত যানজট। ঘটছে ছোট খাটো দুর্ঘটনা। বেড়ে চলেছে পথচারী ও যাত্রীদের ভোগান্তি এবং মানষিক চাপ। অটো ও মিশুকের মাত্রাতিরিক্ত হর্ণের বিড়ম্বনায় পড়ছে যাত্রীরা। দিন দিন অটো ও মিশুক গাণিতিক হারে বেড়ে যাওয়ায় যানজট নামক দুর্ভোগ যেন গ্রাস করছে পৌরবাসীকে। অর্থনৈতিক দৈনন্দিন ব্যয় মিটাতে মাত্র ৩/৪ ঘন্টার প্রশিক্ষণেই অটো এবং মিশুকের স্টেয়ারিং চেপে ধরে রাস্তায় নামছে যুবক ও মধ্যবয়সীরা। অনেক ক্ষেত্রে জীবন জীবিকার তাগিদে কিশোর ও বার্ধক্যে উপনীত মানুষেরাও শহরের সড়কে চালা”েছন অটো। ফলে বাড়ছে অটো ও মিশুকের অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনা এবং দুর্ঘটনা। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অটো মিশুক ড্রাইভিং এর সাথে জড়িত ৯০% ড্রাইভারই উত্তরাঞ্চল থেকে আগত। এইসব অঞ্চলে ৬ মাস কৃষিকাজ থাকায় বাকি ৬ মাসের বেকারত্ব গুছানোর জন্য তারা মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাকে বেছে নেয়। প্রশিক্ষনবিহীন অবস্থায়ই সামান্য হাতেখড়ি দিয়েই যানবাহনের মতো সেনসিটিভ পেশায় জড়িয়ে পড়ে । তারা সড়কের কোন নিয়ম সম্পর্কেই জ্ঞাত নয়। ফলে এইসব ড্রাইভারদের দ্বারা সৃষ্টি হয় যানজট ও ঘটায় দুর্ঘটনা। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা মানিকপুরের অটো গ্যারেজ মালিক শাহআলম, ইবু ও নাসির, পঞ্চসার ইউনিয়নে মুক্তারপুরের জাকির, গণকপাড়ার স্বপন, দক্ষিন ইসলামপুরের আওলাদ, নতুন গাঁয়ের দুলাল ও জুঁলেখা এবং আলী হোসেনের গ্যারেজের ৩০০শ ড্রাইভারের উপর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার পক্ষ থেকে সম্প্রীতি একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সেখানে দেখা গেছে গ্যারেজগুলোতে যারাই অটো ও মিশুক চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগ ড্রাইভারই উত্তরাঞ্চল থেকে আগত। তারা অনেকটাই না পেরেই জীবন জীবিকার তাগিদে জেলা শহরে এসেছেন অটো ও মিশুক চালাতে। এদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ আছেন যারা পূর্বে পায়ে চালিত রিকশা চালাতেন। এখন পায়ে চালিত রিকশা উঠে যাওয়ায় উপায়ন্তর না দেখেই মিশুক ও অটো চালাচ্ছে। সবার ক্ষেত্রে একই অভিজ্ঞতা । নতুন অবস্থায় একা একা রাতের বেলা ১/২ ঘন্টা কিংবা দুই রাতের অল্প প্রশিক্ষন নিয়েই অনেকটা ঝুঁকির মুখে তারা এই পেশায় অভ্যস্ত হয়েছে। এদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এই গ্যারেজগুলোর ড্রাইভারদের অনেকেই আছেন একদম লেখাপড়া জানে না। সংসারের অভাব গুছানোর জন্যই মুন্সীগঞ্জে ছুটে আসা। তবে এদের মধ্যে দুই একজন আছেন যারা কলেজ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন কিন্তু অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধ করে অটো ও মিশুক চালাতে এখানে এসেছেন। ফলে প্রশিক্ষণবিহীন ও সড়কের নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞ অবস্থায় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে যেমন দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে তেমনি সৃষ্টি করছে যানজট। অকারণে হাসপাতাল, অফিস আদালত, স্কুল, কলেজ ও মাতৃসদনের সামনে বিরামহীনভাবে হর্ণ বাজিয়ে তারা করছে শব্দ দূষণ। বিশেষ করে বিগত ৫ বছরে অটো ও মিশুকের মহিলা যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই গাড়ির চাকার সাথে ওড়না ও শাড়ির আঁচলের বাড়তি অংশ পেচিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন এবং প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বরং দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনা ও অটো ও মিশুকের সংখ্যা। আশংকাজনক হাড়ে অটো ও মিশুক বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে জেলার অনেক প্রবাস ফেরত নাগরিক এবং অবস্থাসম্পন্ন বেকার যুবক বেকারত্ব গুছানোর জন্য ৪/৫ টি করে মিশুক কিনে ভাড়া দিয়ে আয় করছেন। ফলে তাদের এই আয় করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে মিশুক ও অটোর সংখ্যা। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে শহরে বেড়ে যাচ্ছে যানজট। বিশেষ করে সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ শহরের মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব থেকে কাচারী চত্বর পর্যন্ত প্রচন্ড যানজট প্রতিদিনের স্বাভাবিক দৃশ্য। যা দিন দিন আরো প্রকোট হয়েছে।
অটো ও মিশুক নিয়ন্ত্রণে পূর্বে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নিলেও তা আর ধারাবাহিক আলোর মুখ দেখেনি। মাঝপথে থেমে গেছে। সম্প্রীতি মুন্সীগঞ্জ পৌর এলাকায় যানজট নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা। এ বিষয়ে উপ-পরিচালক (উপসচিব) স্থানীয় সরকার মুন্সীগঞ্জ ও প্রশাসক মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মৌসুমী মাহবুব জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সড়কে শৃঙখলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুন্সীগঞ্জ মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে অতিরিক্ত অটোরিকশা, মিশুক, ইজিবাইক চলাচল রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও মূল সড়কে স্ট্যান্ড করণ ও অদক্ষ চালক এবং অনিয়ন্ত্রিত চলাচলকে দায়ী করা হয়। যানজট নিরসনে এবং অটোরিকশা ও মিশুক নিয়ন্ত্রনের অংশ হিসেবে তাদের নম্বর প্লেট দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা তিনি জানান। তিনি জানান, এ বিষয়ে পৌরসভার স্মারক নং-১৮৬, তারিখঃ ২৭ মে ২০২৫ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মাইকিং করে জানানো হয়। কিš‘ নির্দিষ্ট সময়ে মাত্র ২০৭১টি আবেদ ফরম জমা হয়। এর মধ্যে পৌরসভার এলাকায় ১৭৫১টি ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন সমূহে ৩১২টি আবেদন ফরম জমা হয়। ফলে প্রত্যাশিত ৩৩৮১টি আবেদন পত্র ১০০ টাকা মূল্যে বিক্রি হলেও সব জমা পড়েনি। এছাড়াও পৌরসভা থেকে নির্দিষ্ট কিউ আর কোর্ড ও সিরিয়াল নম্বর সম্বলিত নাম্বার প্লেট সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও জানান তিনি। যার ভিত্তিতে বৈধ ও অবৈধ যানবাহন চিহ্নিত করা সহজ হবে বলে জানানো হয় এবং পৌরসভার অনুমতি বিহীন যানবাহন পৌরসভার অভ্যন্তরে চলাচল করলে জরিমানা সহ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়। পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, মুন্সীগঞ্জ পৌর এলাকা, জেলা শহর হওয়ায় প্রত্যহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিয়ন মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও নারায়নগঞ্জ হতে শত শত যানবাহন অবাধে প্রবেশ করে। এর ফলে মুক্তারপুর ব্রিজ থেকে যানজট শুরু হয়। যার ফলে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, মিশুক, অটোরিকশা মুক্তারপুর ব্রিজ দিয়ে চলাচল রোধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী বলে জানান। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শহরের কাচারী মোড়, শিল্পকলা একাডেমী ও শহীদ মিনারের সামনে অবস্থানকৃত সিএনজি সমুহের জন্য স্ট্যান্ড নির্ধারণ করে জায়গাটি ইজিবাইক, মিশুক ও অটোরিকশার জন্য স্ট্যান্ড পুনঃনির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। যানজট নিরসনে মুন্সীগঞ্জ ইজিবাইক, মিশুক, অটোরিকশা মালিক সমিতি, মুন্সীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়িক সমিতি সহ অন্যান্য নানা সংগঠন পৌরসভাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া যানজট নিরসনে পৌর এলাকায় আমদানি রপ্তানিকৃত পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য ভারী যানবাহন প্রবেশ যখন তখন করতে পারবে না এবং রাত ৮ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত এসব পণ্য বহনকারী যানবাহন প্রবেশ করার বিষয়ে নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, আইন শৃঙখলা বাহিনীর সহায়তা, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা, ইজিবাইক, মিশুক, অটোরিকশা মালিক সমিতি, নিরাপদ সড়ক চাই মুন্সীগঞ্জ জেলা, বাজার ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতির যৌথ উদ্যোগ যানজট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এমনই প্রত্যাশা করছে মুন্সীগঞ্জ পৌরবাসি। তখন হয়তো পৌরবাসি পাবে কাংখিত যানজট মুক্ত শহর।
© sangbad52 ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ